অনেক নতুন পাঠক ইমেইল পাঠিয়েছেন তারা কিভাবে শুরু করতে পারেন সে বিষয়ে কিছু গাইডলাইনের জন্য। এসংখ্যায় “ঘরে বসে আয়” বিভাগের পাঠকদের জন্য দেশের অন্যতম সেরা ফ্রিল্যান্সার সাঈদ ইসলাম তার অভিজ্ঞতার মূল্যবান কিছু টিপস আমার করা প্রশ্নের উত্তরের মাধ্যমে জানিয়েছেম।

ইন্টারনেটে আউটসোর্সিং কাজ পাওয়ার জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেস ওডেস্ক (www.odesk.com) প্রকাশিত বিভিন্ন কাজে দক্ষ ব্যক্তিদের তালিকায় শীর্ষে আছে বাংলাদেশি মুক্ত পেশাজীবীরা (ফ্রিল্যান্সার) কিছু দিন আগে  ওডেস্ক প্রকাশিত বিষয়ভিত্তিক সেরা দক্ষ ফ্রিল্যান্সারদের তালিকা থেকে তথ্য জানা গেছে

প্রকাশিত সেরা দক্ষ অভিজ্ঞ বিষয়ভিত্তিক ফ্রিল্যান্সারদের তালিকায় গ্লোবালাইজেশন বিভাগের তিনটিতে শীর্ষে আছেন বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সার সাঈদ ইসলাম এর মধ্যে নেটওয়ার্ক অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের লিনাক্স এবং অ্যাসটারিস্ক সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট বিভাগের ভিওআইপিতে শীর্ষে আছেন তিনি  তিনটি বিভাগে শীর্ষে থাকার পাশাপাশি এটুবিলিংয়ে ফ্রিপিবিএক্সে দ্বিতীয়, ট্রিক্সবক্স জিমব্রাতে পঞ্চম স্থানে আছেন তিনি
 
উল্লেখ্য ওডেস্কে তিন হাজার ৪০০ ঘণ্টার বেশি কাজ করা সাঈদ ইসলাম ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ওডেস্কে থেকে কাজ নেয়া শুরু করেন, ২০১১ সালের এপ্রিল মাসে তিনি ওডেস্কের স্পট লাইট কনট্রাক্টর তালিকায় জায়গা করে নেন  ওডেস্কে তার এজেন্সি “বিগমাসটেক” বাংলদেশ থেকে সব থেকে বেশী উপার্জন করা এজেন্সি।

বিশ্বখ্যাত সার্চ ইঞ্জিন গুগল থেকে সিনিয়র সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার পদে চাকরির সুযোগ পান সাইদ ইসলাম কিন্তু দেশের প্রতি ভালোবাসা ও দেশে নতুনদের শিখানোর জন্য গুগলের প্রস্তাব করা চাকরি ফিরিয়ে দেন বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ সুযোগ পাওয়ার পর দেশের পাশাপাশি ভারতে কাজ করার সুযোগ চেয়ে জানতে পারি, সেখানে গুগলের অফিস কার্যক্রম নেই তাই আমার আর পদে যোগ দেওয়া হয়নি



#  ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং শুরু করতে কি কি প্রস্তুতি দরকার?
একটু মজা করে শুরু করি। ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে তেমন কোন প্রস্তুতির দরকার হয় না, পথে ঘাটে বিজ্ঞাপন দিলেই হয় যেমন ধরা যাক ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফার, ফ্রিল্যান্স পিএইচপি প্রোগ্রামার, ফ্রিল্যান্স কাঠমিস্ত্রী, ফ্রিল্যান্স ক্লিনার ইত্যাদি; তবে আউটসোর্সিং (ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং এক জিনিস নয়) এর কাজ শুরু করতে হলে কয়েকটা ব্যাপার মনে প্রাণে গেঁথে নিতে হবে যেগুলো হলঃ

  • ·         এটি শুনতে যতটা সহজ মনে হয় প্রকৃত পক্ষে তা নয়
    ·         আউটসোর্সিং এর কাজ করতে কোন প্রকার অর্থের প্রয়োজন হয় না শুধু মেধাই পুঁজি।
    ·         পূর্ণ ধারণা এবং আউটসোর্সিং এর উপযোগী এমন অন্তত একটি কাজের দক্ষতা থাকতে হবে।
    ·         আউটসোর্সিং আর আইটি একই জিনিস নয়, অর্থাৎ আইটি অভিজ্ঞতা না থাকলে যে এ কাজ করা যাবে না সেটা ভুল।
    ·         আউটসোর্সিং ব্যাপারটি কি এর উপর পর্যাপ্ত রিসার্চ করতে হবে।
    ·         শুরুতে এ ক্ষেত্র থেকে কত আয় করা যাবে তা নিয়ে চিন্তিত না হয়ে মানসম্পন্ন দক্ষতার দিকে মনযোগী হতে হবে।
    ·         অর্থ উপার্জন যে একটি সহজ কাজ নয় সেটি মনে রাখতে হবে।
    ·         ইংরেজিতে দখল থাকতে হবে
      
      # কোন ট্রেনিং এর প্রয়োজন আছে কিনা?

    সঠিক ভাবে রিসার্চ করলে কোন প্রকার ট্রেইনিং এর প্রয়োজন নেই তবে গাইড লাইন এর 
    প্রয়োজন হতে পারে তাদের জন্য যাদের আউটসোর্সিং এর উপযোগী কাজ এ দক্ষতা আছে কিন্তু 
    রিসার্চ এ সফল হয়নি।


    # ট্রেনিং ছাড়াও অনলাইনে শেখা যায় কিন্তু কোন কাজ গুলো?

      'শেখা' ব্যাপার টি সম্পূর্ণ নিজস্ব একটি ব্যাপার। আমার অভিজ্ঞতা অনুযায়ী ইন্টারনেট এর সাহায্য নিয়ে সব কাজই শেখা সম্ভব তবে সে ক্ষেত্রে ওই বিষয়ের উপর সঠিক ধারণা থাকতে হবে, যেমন সঠিক বাক্য গঠনের ক্ষেত্রে ব্যাকরণ জানা প্রয়োজন। ধারনায় ঘাটতি থাকলে অথবা ইন্টারনেট এর মাধ্যমে শিখতে অসফল হলে ট্রেইনিং এর সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। 


    স্কিল বাড়ানোর উপায়?
     
            * আত্মবিশ্বাস

           *  কৌতূহল

           *  আগ্রহ

           * চেষ্টা


      # কমপক্ষে কতটুকু স্কিলড হলে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে পারে একজন?

    নুন্যতম মধ্যমানের দক্ষতা প্রয়োজন।

      # ইদানিং ভুয়া ট্রেনিং সেন্টার এর কার্যক্রম লক্ষ করা যাচ্ছে, এদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেয়ার পরিকল্পনা আছে কি?

    ভুয়া ট্রেইনিং সেন্টার না বলে বলবো 'ট্রেইনিং সেন্টার নামক প্রতারণা মুলক বাণিজ্য'। আমি 
    ইতিমধ্যে প্রচারণার মাধ্যমে যতটুকু সম্ভব সচেতন করে আসছি তবে সরকার উপযুক্ত নীতিমালার
     মাধ্যমে পদক্ষেপ নিলে বেশী কার্যকর হবে। 

      # অনেকেই বলে অনলাইন থেকে শিখতে, কিন্তু প্রোগ্রামিং, ওয়েব ডেভেলাপমেন্ট, সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এইসব জটিল কাজগুলো আসলেই কি অনলাইন থেকে শিখতে পারা যায়?

    বিষয়টির উপর প্রাথমিক এবং সঠিক ধারনা থাকলে শেখা সম্ভব তবে এক্ষেত্রে ব্যক্তি অবশ্যই স্মার্ট 
    হতে হবে।

      # কোন কোন কাজগুলোর বর্তমানে চাহিদা বেশী?

    প্রথমত আমি বলবো ডেটা এন্ট্রি, যা অনেকেই একে এসইও বলে থাকে, এর চাহিদা অনেক বেশি,
     এরপর মূল এসইও এর কাজ ও ওয়েব ডেভেলপমেন্ট। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে ইউনিক কিছু 
    কাজ জানা থাকলে ভাল; যেমন অ্যানিমেশন, থ্রিডি গ্রাফিক্স, ক্লাউড কম্পিউটিং, জনপ্রিয় ওপেন
     সোর্স প্রযুক্তি, ইত্যাদি। 

       # ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং এ ইংরেজী এর গুরুত্ব?

    মূলত ক্লায়েন্ট এর সাথে যোগাযোগের জন্য ইংরেজি জানা প্রয়োজন কারণ এটি কাজ পাবার সম্ভবনা বাড়িয়ে দেয়। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে, যে সকল কাজের সাথে ইংরেজির সম্পৃক্ততা আছে সেক্ষেত্রে ইংরেজি জানা খুবই প্রয়োজন। যেমন ধরা যাক আর্টিকেল রাইটিং অথবা কমেনটিং। এছাড়া ক্লায়েন্ট এর সাথে কি ভাবে যোগাযোগ অথবা কথা বলতে হবে সে ব্যাপারে অবশ্যই সঠিক ধারণা থাকতে হবে। এক দেশের গালি অন্য দেশের বুলি, কথাটি মনে রাখতে হবে।

    v  অনেকেই কাজ জানে কিন্তু মার্কেটপ্লেস গুলোতে কাজ পায় না, শেষে অধৈয্য হয়ে এগুলো থেকে সরে দাঁড়ায়। একজন স্কিলড মানুষ কিভাবে তার মেধা কাজে লাগিয়ে কাজ পেতে পারে?
    পূর্বের মতো করে বলবঃ
    ·         আত্মবিশ্বাস
    ·         আগ্রহ
    ·         চেষ্টা, চেষ্টা এবং চেষ্টা

      # অনেকেই প্রথম কাজ পেতে অনেক সময় লাগে, আপনি নিজের কিভাবে প্রথম কাজ পেয়েছিলেন ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলুন।

    শুরুতে কাজ পেতে সময় লাগে কথাটির সাথে আমি একমত নই। সঠিক ভাবে আবেদন পদ্ধতি অনুসরণ করলে কাজ পেতে দেরি হবার কথা নয়। আমি প্রথমে আউটসোর্সিং ব্যাপারটি কিভাবে কাজ করে সেটির সম্পর্কে সঠিক ধারণা নিই। মার্কেট প্লেইস এ সুন্দর একটি প্রোফাইল তৈরি করি সাথে করে কিছু পরীক্ষা দিই যা আমার দক্ষতার সাথে সম্পৃক্ত। তারপর নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ পোস্ট এর তালিকার সাথে মিলিয়ে কাজ খুঁজতে থাকি। শুধু মাত্র পছন্দ মতো কাজ এর পোস্ট পড়ি এবং ক্লায়েন্ট এর প্রয়োজনটি বোঝার চেষ্টা করি। তারপর প্রোফেশনাল কভার লেটার লেখার পদ্ধতি অনুসরণ করে আমার দক্ষতা ও যোগ্যতার বর্ণনা দিয়ে আবেদন করি। প্রথম কাজটি সিস্টেম মাইগ্রেশন ভিত্তিক ছিল যেখানে আমি আবেদনের সময় কাজ সম্পৃক্ত একটি প্রস্তাবিত ড্রাফ্‌ট সিস্টেম নেটওয়ার্ক নকশা করে ক্লায়েন্ট কে পাঠিয়েছিলাম যেটা তাকে বিশেষ ভাবে আকর্ষণ করেছিল।

        # নতুনদের জন্য আপনার পক্ষ থেকে কোন সেমিনার বা কর্মশালার আয়োজন করা হয় কি?

    কর্ম ব্যাস্ততার ফাঁকে ফাঁকে আমার কর্মস্থল বিগমাসটেক এর অফিসে এ সাপ্তাহিক কিছু কর্মশালার আয়োজন করে থাকি। যেহেতু আমি ইনফরমেশন টেকনোলজির বিশেষ একটি ক্ষেত্রের সাথে জড়িত সেহেতু কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং এ শেষ বর্ষের অথবা সদ্য পাস করা ছাত্র/ছাত্রীদের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চাকুরী, রেজুইমি, ইন্টারভিউ, আউটসোর্সিং, ওপেন সোর্স টেকনোলজি ও এর কর্মক্ষেত্র বিষয়ক সেমিনার ও কর্মশালা করে থাকি। এছাড়া অন্যান্য যারা আউটসোর্সিং এর কাজ করতে আগ্রহী কিন্তু জানে না কিভাবে বা কোথা থেকে শুরু করতে হয় তাদেরকে নিয়েও কর্মশালা করে থাকি।

       #  আপনি কি একাই কাজ গুলো করে থাকেন না কোন টিম রয়েছে আপনার?
    আমি সাধারণত যে ধরণের কাজ করে থাকি সেগুলোর জন্য বাংলাদেশে দক্ষ মানুষের বেশ অভাব। ছয় সদস্য বিশিষ্ট ছোট একটি টিম আছে যারা আমার প্রতিষ্ঠান বিগমাসটেকে কর্মরত। টিমের সদস্যদেরকে আমি নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছি এবং তাঁরা অসাধারণ কাজ করছেএদের মধ্যে সুশান্ত রায়, কামরুন নাহার ও শাফরিনা এর না বললেই নয়কাজের ধরণ বিশেষে বেশির ভাগ কাজই আমার নিজেকেই করতে হয় তারপরও আমার টিম আমাকে যথেষ্ট সহযোগিতা করে থাকে।

    # সবশেষে যারা ফ্রিল্যান্সিং মোটামোটি শুরু করেছে, তাদের জন্য কিছু টিপস দিনকিভাবে তারা নিজের অবস্থান শক্ত করতে পারে

    কাজ জানা না থাকলে আগে কাজ শিখতে হবে এবং দক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে, তারপর আউটসোর্সিং উপর পর্যাপ্ত রিসার্চ যা এই ক্ষেত্রটির উপর পূর্ণ ধারণা দিবে শুরুতে কত অর্থ উপার্জন করা যাবে তা নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে প্রথম কাজটি কিভাবে পাওয়া যায় সেটির জন্য ধৈর্য সহকারে যথেষ্ট চেষ্টা করতে হবে।
    অনুকরণ না করে কাজ সম্পৃক্ত সফল কিছুকে অনুসরণের মাধ্যমে নিজের অবস্থান শক্ত করা সম্ভব বলে আমি বিশ্বাস করি।

    সাইদ ইসলামের সাথে যোগাযোগ করার ঠিকানাঃ
    Bigmastech Communications Limited
    Unit 5A House 88 Road 17A
    Banani Block E, Dhaka 1212
    Bangladesh
    Phone: +880-2-883-7900

    সবশেষে যারা বিভিন্ন ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসে এখনও নিজের অবস্থান ঠিকমত গড়ে তুলতে পারেননি এবং নিজের স্কিল বাড়ানোর জন্য মনে করেন প্রশিক্ষন দরকার। তারা আমাদের দেশের কয়েকজন অন্যতম ফ্রিল্যান্সার দ্বারা আয়োজিত ফ্রি সেমিনার, প্রশিক্ষন, কর্মশালায় যোগ দিতে পারেন।
    নিচে কয়েকজন ফ্রিল্যান্সারদের নাম, ওদের প্রতিষ্ঠানের নাম ও ওয়েবসাইটের ঠিকানা দেয়া হলঃ
    জাকারিয়া চৌধুরী, সিলেট আইটি একাডেমী, http://www.sylhetitacademy.com 
     সাইদ ইসলাম, বিগমাসটেক ট্রেনিং সেন্টার http://www.training.bigmastech.com
     

     
     
     

     



0 টি মন্তব্য

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন