কোথাও চাকরীর আবেদন করতে হলে যেমন প্রতিষ্ঠানের নিকট আপনার বায়ো-ডাটা জমা দিতে হয় ঠিক তেমনি ফ্রিল্যান্সিং করতে হলেও একটি “ভার্চুয়াল” বায়ো-ডাটার প্রয়োজন হয়। এখানে সুবিধা হচ্ছে আপনাকে বারবার বায়ো-ডাটা জমা দিতে হবে না। শুধু নির্ধারিত মার্কেটপ্লেসে একটি প্রোফাইল তৈরি করবেন ব্যস। বাকি কাজ ক্লায়েন্ট / বায়ারের। তারাই নিজ উদ্যোগে আপনার প্রোফাইল দেখে নিবে। বলে রাখা ভাল যে ফ্রিল্যান্সিং কখনোই কোন চাকরি নয় বরং তার চাইতেও ভাল কিছু। তবে নিজেকে একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হিসেবে প্রমান করার পূর্বশর্ত হচ্ছে মার্কেটপ্লেসে একটি সাজানো গোছানো প্রোফাইল প্রস্তুত করা। অগোছালো বা অপূর্ণ প্রোফাইল দিয়ে হয়তো টুকটাক কিছু কাজ পাওয়া যাবে কিন্তু চূড়ান্ত সফলতা পাওয়া সম্ভব নয়। আমার এই টিউনটিতে কিভাবে নিজের প্রোফাইল সুন্দর করে সাজাবেন তা বর্ণনা করবো। তাহলে চলুন শুরু করা যাকঃ

প্রোফাইল পিকচার বা ছবিঃ

আপনার ফ্রিল্যান্সার প্রোফাইলে ঢুকেই সর্বপ্রথম যা চোখে পরে তা হচ্ছে আপনার ছবি। প্রোফাইল পিকচার হিসাবে কোন ছবি বাছাই করার ক্ষেত্রে সতর্ক হউন।মন গড়া ভাবে যেনতেন ছবি ব্যবহার থেকে বিরত থাকা অত্যাবশ্যকীয় ।এমন কোন ছবি ব্যবহার করবেন না যেখানে আপনার ব্যক্তিত্বে আঘাত হানে। আপাদ-মস্তক কোন ছবি দিবেন নাকারন প্রোফাইল পিকচারের জায়গাটি অনেক ছোট হয়ে থাকে।এরকম ছবিতে আপনার চেহারা সম্পূর্ণরুপে বুঝা যাবে না। আবার কোথাও ভেকেশানে গিয়েছিলেন সেখানে চরম আনন্দময় মুহূর্তে ছবি উঠিয়েছেন,আমি সেটি ব্যবহার থেকেও আপনাকে বিরত থাকার পরামর্শ দিবো। অথবা সব ঠিকঠাক আছে কিন্তু ব্যকগ্রাউন্ডে দেখা গেল দামী কোন মডেলের গাড়িতে হেলান দিয়ে তুলা হয়েছিল ছবিটি।বিশ্বাস করুন কোন ক্লায়েট এতো পয়সা ওয়ালা একজন কন্ট্রাক্টরকে হায়ার করবেন না।মুলত সে ভয় পাবে আপনার সাথে নেগোশিয়েশন করতে।জাস্ট বি প্রফেশনাল।তার মানে নিশ্চই কোট-টাই পড়া, ব্যাকগ্রাউন্ড সাদা কালারের, মুখ গম্ভীর করা কোন ছবি বাছাই করতে বলছি! জি না। এতটা প্রফেশনাল কোন ফ্রিল্যান্সারের হওয়া উচিত নয়।
প্রথমত প্রোফাইল পিকচারে আপনার চেহারা স্পষ্টবুঝা যেতে হবে।সিম্পল হাস্যোজ্যল হবে আপনার চেহারা। কোট-টাই প্রয়োজন নাই।টি শার্ট পড়া ছবি হলে আমি বেশী প্রাধান্য দিবো।কিন্তু আপনার চেহারাকে মাধুর্য প্রদান করবে এমন পোশাক পরিহিত ছবিই বাছাই করুন।খুবই সাধারণ ব্যকগ্রাউন্ড রাখুন ছবিটির যেন কোন ক্রমেই পর্যবেক্ষকআপনার চেহারার চাইতে বেশি দৃষ্টি সেখানে না দেয়। অমলিন এক চিলতে হাসি দেওয়া পোট্রেইট সাইজের ছবি রাখুন প্রোফাইল পিকচার হিসাবে।প্রয়োজনে প্রফেশনাল কোন ফটোগ্রাফার দিয়ে আজই একটি ছবি তুলে নিন।

টাইটেল-ট্যাগ, ডেসক্রিপশনঃ
আপনার স্কিল অনুযায়ী টাইটেল-ট্যাগ-ডেসক্রিপশন লিখুন। একই ধাচের কাজের নাম দিয়ে টাইটেল ও ট্যাগ লাইন বসান। ধরুন আপনি HTML,CSS,HTML5,CSS3,PSD  to HTML,PHP, JavaScript, WordPressএসব কাজ ভাল জানেন।তাহলে ক্রমানুসারে এগুলা বসান টাইটেল ট্যাগ হিসাবে। কিন্তু একই সাথে ওয়েব ডিজাইন,ইন্টারনেট মার্কেটিং, এপ্লিকেশন ডেভলাপমেন্ট,সার্ভার রক্ষনাবেক্ষন, কাস্টমার সার্ভিস এবং কন্সাল্টেন্সি জাতীয় কাজ আপনার প্রোফাইল রাখবেন না।এতে আপনার প্রোফাইলের সক্ষমতা নস্ট হয়।যা করছেন একটা কাজ করুন এতে আপনার ইন্ডস্ট্রিতে আপনি সহজে দক্ষতা অর্জন করতে পারবেন। সফলতাও পাবেন।তাছাড়া সার্চ ইঞ্জিনে আপনাকে খুজে পেতে টাইটেল অংশটি বিরাট ভুমিকা রাখে। ডেসক্রিপশন/অভারভিউ লিখার ক্ষেত্রে ক্রিয়েটিভিটি প্রদর্শন করুন। প্রথম লাইনে এমন কিছু বলার চেষ্টা করুন যেন ক্লায়েন্ট দেখা মাত্র সম্পূর্ণটি পড়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
আপনি কোন কাজে এক্সপার্ট বেশী,কোনটিতে কম এখানে এসব বলার প্রয়োজন নেই। কারন আপনার টাইটেল আর ট্যাগ লাইন বলে দিবে আপনার দক্ষতা।  ডেসক্রিপশনে আপনার অভিজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারেন। এছাড়া আপনার কাজ করার স্ট্রেটিজি অল্প কথায় লিখুন।ক্লায়েন্টের সাথে যোগাযোগ এবং কাজের ব্যপারে আপনি যথেষ্ঠ বন্ধু ভাবাপন্য সেটি উল্লেখ করুন। বুঝাবার চেষ্টা করুন আপনি কাজকে ভালবাসেন বলেই এ ধরনের কাজ করেন। ডেস্ক্রিপশনে কোথাও গ্রামারটিক্যাল ভুল বা ভাবের আতিশয্য যেন প্রকাশ না পায় সেটি লক্ষনীয়। কারন আপনার নিজের প্রোফাইল ডেসক্রিপশনেই যদি টুকটাক ভুল রেখে দেন তা হলে ক্লায়েন্টের কাজে যে ভুল রাখবেন না সেটি কিভাবে আশা করা যায়! তাই ইংরেজীর প্রতি যত্নবান হউন। ইন্টারনেটে অনেক গ্রামার চেকার টুল রয়েছে। চাইলে অবশ্যই আপনার ডেসক্রিপশনটি সেখানে চেক করিয়ে নিতে পারেন।
ভিডিও ডেসক্রিপশনঃ
ফ্রিল্যান্সার পেশা মানেই নতুন কিছু করতে চাওয়ার আগ্রহ। তাই নতুনত্বের মর্যাদা এখানেই সব চেয়ে বেশী। প্রায় সব ফ্রিল্যান্স/আউটসোর্সিং মার্কের প্লেস তাদের কন্ট্রাকরদের জন্য সম্প্রতি নতুন এই ফিচারটি যোগ করেছে। আপনি চাইলে এখনই আপনার নিজের সম্পর্কে কিছু বলে ভিডিও রেকর্ড করে আপলোড করে দিতে পারেন আপনার প্রোফাইলে। সর্বোচ্চ ১ মিনিটের একটি ভিডিওতে আপনি কি ধরনের কাজ করেন,কাজের প্রতি আপনার আগ্রহ,কোন মড়ালের ভিত্তি করে কাজ করেন এবং সর্বশেষে ক্লায়েন্ট কিভাবে-কোথায় আপনার সাথে যোগাযোগ করতে পারে হাসি মুখে বলুন।ভিডিও ডেসক্রিপশন মুলত কন্ট্রাক্টর এবং ক্লায়েন্ট এর সম্পর্ককে আরও এক ধাপ সামনে এগিয়ে নিতে সাহায্য করে। ভিডিও রেকর্ডের সময় লক্ষ রাখুন যেন ব্যকগ্রাউন্ডে কোন নয়েজ না থাকে এবং সর্বোচ্চ রেজুলেশন রাখার চেষ্ঠা করুন।ভিডিও ডেসক্রিপশনটি কেমন হবে তার একটি নমুনাঃhttps://www.youtube.com/watch?v=hn_EG_1zXPY
কেমন হবে কাজের রেটঃ
আপনি কি রকম ঘন্টা প্রতি রেটে কাজ করতে আগ্রহী তার একটি সাধারন ধারণা ক্লায়েন্ট আপনার প্রোফাইলে দেয়া ঘন্টাপ্রতি রেট থেকে পায়।কাজেই এটি নির্বাচনের সময় একটু ভেবে চিন্তে লিখুন। সবচেয়ে ভাল হয় আপনার ইন্ডাস্ট্রির অন্যান্য দক্ষ ব্যক্তিরা কি রেটে কাজ করে তা জানুন। তাদের কাজের সাথে আপনার নিজের কাজের তুলনা করুন তারপর ঠিক করুন আপনার ঘণ্টা প্রতি কাজের দাম কত হওয়া উচিত। তবে কখনই কম দামে কাজ করবেন না।আপনার কাজের মুল্য কি সেটা আগে জানুন পরে দাম ঠিক করুন।আমি একটি নীতিতে বিশ্বাস করিঃ “Do it free rathen than doing it less”

পোর্টফোলিওঃ

আপনি এ পর্যন্ত যত ফ্রিল্যান্স কাজ করেছেন তার স্ক্রিনশট নিয়ে উক্ত কাজের বিবরন এবং লাইভ লিঙ্ক সহ আপনার প্রোফাইলে যোগ করতে পারেন।এখানে উল্লেখ্য যে আজে বাজে কোন কিছু পোর্টফোলিও আইটেম হিসাবে এড না করাই বুদ্ধিমানের কাজ। এতে আপনার ইম্প্রেশন নষ্ট হওয়া থেকে বেঁচে যাবে।তাই আপনার প্রোফাইলটাযেই ধরনের কাজ করার জন্য তৈরি করতে চাচ্ছেন সেই সম্পর্কিত অতীতের অনুশীলন এবং অন্য ক্লায়েন্ট এর জন্য করা কাজের স্ক্রিনশট দিতে পারেন। তবে অবশ্যই তাদের অনুমতি সাপেক্ষে।
টেস্টসঃ
ফ্রিল্যান্স প্রোফাইল তৈরির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে টেস্টস। একজন ফিল্যান্সার কোন ক্যাটাগরিতে কাজ করে সেখানে তার দক্ষতা কতটুকু তা বুঝার জন্য কোন ক্লায়েন্ট টেস্ট অংশটুকুতে চোখ ভুলাতে ভুল করেনা। তাই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এই টেস্ট অংশটি সাজানো উচিত আমাদের।প্রোফাইলের শুরুর দিকে যেই টাইটেল-ট্যাগ এবং ডেসক্রিপশন অংশটি শেষ করেছি এখানে তারই প্রতিফলন পরবে। তাই আপনি কেই ক্যাটাগরির কাজ করুন না কেন সকল মার্কেটপ্লেসেই সেগুলোর কিছু না কিছু টেস্ট রয়েছে। একটু সময় নিয়ে হলেও টেস্ট গুলো দিন। ভাল ফলাফল করা টেস্ট গুলোর রেজাল্ট পাবলিক ভিসিবল করে রাখুন আর খারাপ করা টেস্ট গুলো হাইড করে রাখতে পারেন ইচ্ছে করলে।

এমপ্লয়মেন্ট হিস্টোরি, শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং অন্যান্য অভিজ্ঞতাঃ
যদিও এই অংশগুলোর একটাও ততোটা গুরুত্ব পূর্ণ নয় তথাপি নিজের প্রফাইলের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে নিশ্চয়ই এই বিষয় গুলো হালনাগাদ করে নিতে কেও আপত্তি করবেন না। শুধু তাই নয় যখন একজন ক্লায়েন্ট আপনার প্রোফাইলে এসে দেখতে পাবে প্রত্যেকটা অংশে আপনার সুচারু হাতের স্পর্শ রয়েছে নিঃসন্দেহে এরকম একটি প্রোফাইলের প্রতি ক্লায়েন্ট দুর্বল হয়ে পরবে। সে বুঝবে আপনি আপনার ফ্রিল্যান্স প্রোফাইল নিয়ে কতটা সিরিয়াস এবং ভবিষ্যতে যদি সে আপনাকে হায়ার করে তাহলে তার কাজেও আপনি এরকমই সিরিয়াসনেস প্রদর্শন করবেন- এরকমই ধারণা জন্মাবে তার মনে।
আরও কিছু বিষয় রয়েছে হয়তো আমি জেনে শুনেই এরিয়ে গিয়েছি কারন এমন কিছু বিষয় আছে যা সবাই যানেন কাওকে বলে দেয়া লাগে না। অসংখ্য ভুল ভ্রান্তিতে ভরা থাকতে পারে আমার এই লিখাটিতে কিন্তু এ পর্যন্ত নিজে যে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে তা আজকে এখানে তুলে ধরার প্রয়াস করেছি মাত্র। ভুল গুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ জানাচ্ছি।

লেখক: আনোয়ার হোসাইন
বিঃদ্রঃ - এই লেখাটি "মাসিক কম্পিউটার জগৎ" ম্যাগাজিনের "জানুয়ারী ২০১৪" সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে।

0 টি মন্তব্য

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন