সবাইকে ৪ পর্বের পিপল পার আওয়ার (পিপিএইচ) সংক্রান্ত বিস্তারিত ধারাবাহিক আলোচনায় স্বাগত জানাচ্ছি। চার পর্বের প্রথম প্রতিবেদনে আজ আমি আলোচনা করতে যাচ্ছি,

ক. পিপিএইচ কি?
খ. পিপিএইচের বৈশিষ্ঠসমুহ।
গ. অন্যান্য অনলাইন মার্কেটপ্লেসের সাথে পিপিএইচের তুলনা।



পিপিএইচ কি?

পিপিএইচ হচ্ছে পিপল পার আওয়ার (PeoplePerHour.com) এর সংক্ষিত রুপ, যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি অনলাইন মার্কেটপ্লেস। প্রচলিত অনলাইন মার্কেটপ্লেস যেগুলো ভিন্ন ভিন্ন কাজ আউটসোর্স বা ফ্রীল্যান্সিং করবার জন্য সুযোগ দিয়ে থাকে তাদের মতোই একটি অনবদ্যস্কিল বিক্রি করবার মার্কেটপ্লেস।

পিপিএইচ একটি অনলাইন ফ্রীল্যান্স মার্কেট প্লেস, আট দশটি মার্কেট প্লেসের মতো এখানেও কাজের আদান প্রদান হয়, তবে মৌলিক কাঠামো এক হলেও বেশ কিছু ফিচার আছে পিপিএইচের যা কিনা অন্য মার্কেটপ্লেসের থেকে ভিন্ন, একটু আলাদা আর আকর্ষনীয়।

আরেক ভাষায় পিপিএইচ হচ্ছে একটি ক্রাউডসোর্সিং প্লাটফর্ম অর্থাৎ প্রফেশনাল অফিসের সরনাপন্ন না হয়ে যদি কোনো ব্যাবসায়ী বা ক্রেতা সুনির্দিষ্ট কোনো সার্ভিস বা কাজ অনলাইন কমিউনিটি, এই ক্ষেত্রে ফ্রীল্যান্সার বা আউটসোর্সারদের কাছ থেকে নিলাম করে কিনে নেয় তবে তাকে ক্রাউডসোর্স বলা যেতে পারে, যার প্রকৃষ্ট উদাহরন পিপিএইচ।

এখানে কন্ট্রাক্টর তথা কাজ যিনি দিতে চাইছেন বায়ার হিসেবে সেই জব পোস্ট করতে পারেন অনায়াসেই, আবার যিনি কারিগর তথা কাজ আউটসোর্স করবেন তিনিও পারেন সেলার হিসেবে তার দক্ষতা বিক্রি করতে। একই সাথে একজন কাজ কিনতে পারবেন, আবার তা বিক্রয়ের জন্য প্রদর্শন করতে পারবেন, যেখান থেকে হাজার হাজার বায়ার বা ক্লায়েন্ট পছন্দসই কাজ বেছে নিতে সক্ষম হবেন।

অনলাইন মার্কেটপ্লেসের সংখ্যা দিনে দিনে বেড়ে চলেছে, তবে বিশ্বব্যাপি সমাদ্রিত হতে বেশ কিছু বৈশিষ্ঠের প্রয়োজন হয় প্রতিটি মার্কেটপ্লেসের, যেমন, গ্রহনযোগ্যতা, কাজের সুযোগ, প্রতিযোগিতামূলক ভারসাম্য, অর্থকরি উত্তলনের সুব্যাবস্থা ইত্যাদি।

পিপিএইচ খুব বেশিদিন হয় নি তাদের যাত্রা শুরু করেছে, ২০০৭ এ জিনিওস ত্রিসিভালু ও সিমস কিতারেস সম্মিলিতভাবে চালু করে ওয়েব-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি। শাখা রয়েছে লন্ডন আর নিউইয়র্ক শহরে।এই মুহুর্তে পিপিএইচে অ্যাক্টিভ ইউজারের সংখ্যা রয়েছে প্রায় আড়াই লক্ষ, তন্মধ্যে এক লাখ আশি হাজার ফ্রীল্যান্সার এবং সত্তর হাজার ক্লায়েন্ট বা বায়ার।বেশিরভাগ ক্লায়েন্ট বা বায়ারেরা ফুল টাইম প্রফেশনাল কোম্পানির বদলে প্রাধান্য দিয়ে থাকে ক্ষুদ্র উদ্যোগে গড়ে ওঠা একক ফ্রীল্যান্সারদের। আর এই কারনেই পিপিএইচে কোম্পানি বহির্ভুত স্বাধীন ফ্রীল্যান্সারের চাহিদা প্রচুর।


পিপিএইচের বৈশিষ্ঠ্যসমূহ:

বেশ কিছু কারনে পিপল পার আওয়ার অন্য অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোর চেয়ে খানিকটা ভিন্ন, এর মধ্যে প্রধান একটি কারন পিপিএইচের ইউজার ইন্টারফেস, খুব সহজ আর সোজাসাপ্টাভাবে গঠন করা হয়েছে সাইটটির স্ট্রাকচার বা ম্যাপ, পিপিএইচে আপনি কাজ করবেন অনেকটাই স্বাচ্ছন্দের সাথে, কড়াকড়ি অনেক অংশেই কম, তবে নিয়ম নীতি অমান্য করারও অবকাশ নেই। কড়াকড়ি কম তবে কিভাবে? যেমন ধরুন ঘন্টা প্রতি হিসেব করে কাজ করছেন, অন্যান্য মার্কেটপ্লেসে আপনার আলাদা একটি সফটওয়ার ইন্সটল করে নিতে হবে টাইম ট্র্যাক বা সময় পরিমাপ করার জন্য, কিন্তু পিপিএইচে এই ঝামেলা নেই, সরাসরি কাজ শেষ করে নিজেই হিসেব করে লিখে উল্লেখ করে দিতে পারবেন আপনার ক্লায়েন্টের কাছে, যে কয় ঘন্টা কাজ করেছেন সেই হিসেবেই পেমেন্ট পেয়ে যাবেন।

পিপিএইচের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফিচার হচ্ছে আওয়ার্লি, একটি সোজা উদাহরন দিয়ে বুঝিয়ে দি জিনিশটা কি, ধরুন মেলায় গিয়েছেন, প্রচুর স্টল রয়েছে, প্রতিটি স্টলে আকর্ষনীয় পন্য সাজানো আছে, স্টলগুলি সাজানো জমকালো ও নজরকাড়া সাজে, এখন আপনি মেলায় ক্রেতা হিসেবে গিয়েছেন, একটি স্টলে আপনার চাহিদা অনুযায়ী নির্দিষ্ট পন্যটি বেছে নিলেন, ঠিক একইভাবে পিপিএইচে আপনি আপনার স্কিল প্রদর্শন করতে পারবেন, নিজের মতো একটি স্টল বানিয়ে নিয়ে তাতে জাকজমকপূর্ন তথ্যের ভান্ডার যুক্ত করতে পারবেন, যা বায়ার এসে পরখ করে দেখতে পারবে, এবং পছন্দ হলে চট করে কিনে নেবেন, আপনি টাকা পেয়ে যাবেন মুহুর্তের মধ্যেই, আর আপনার স্কিল বিক্রি করার প্রয়াসে বায়ারের কাজ শুরু করে দিবেন, এমন করে বেশ কটি স্কিল আপনি বিক্রি করার জন্য আওয়ার্লি আকারে পিপিএইচে প্রদর্শন বা শো-অফ করতে পারেন, বিশ্বমানের স্কিল অনায়াসেই বার বার করে সেল পড়া শুরু করবে। আওয়ার্লির অদ্যপ্রান্ত, খুঁটি-নাটি নাট-বল্টু আর কিভাবে একটি বিশ্বমানের আওয়ার্লি তৈরি করে জিতে নিতে পারেন হাজার দর্শকের চাহুনি আর বেশ কটি বায়ারের মন, তা নিয়ে পুরো একটি পর্ব আপনাদের সামনে হাজির করবো তৃতীয় খন্ডে।

পিপিএইচের সাইটে ক্লায়েন্টদের বায়ার বলা হয়, আর কন্ট্রাক্টর বা ফ্রীল্যান্সার যারা কাজ করবেন তাদের বলা হয় সেলার, এই বায়ার আর সেলার নিজেদের মধ্যে একটি প্রজেক্ট নিয়ে যখন কাজ করবে, তখন সব কিছু ঘটবে একটি নির্দিষ্ট পাতায়, পেমেন্ট, চ্যাটিং, ডিপোজিট, ফাইল শেয়ার করা, লিঙ্ক প্রদান, সব কিছু ঘটবে ওয়ার্কস্ট্রিম-এ, এই ওয়ার্কস্ট্রিম সহ অ্যাডভান্স কিছু ফিচার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে চতুর্থ খন্ডে, যেখানে সব কিছু আপনাদের গুছিয়ে প্রদর্শন করে দেয়া হবে, যাতে করে অনায়াসেই আপনারা বুঝে উঠে পিপিএইচ ব্যাবহার করা শুরু করতে পারেন, তাই অবশ্যই চোখ রাখুন।


অন্যান্য অনলাইন মার্কেটপ্লেসের সাথে পিপিএইচের তুলনা:

পিপল পার আওয়ার অনেকটাই লেইড ব্যাক অর্থাৎ সরল স্কিল বিক্রিকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে, যেমন প্রতি মাসে যখন স্টিভ ফলিন সেরা আওয়ার্লি ফিচার করে ভিডিও উপস্থাপন করেন তখন কোনো না কোনো স্কিল খুবই ভিন্নধর্মী বা ব্যতিক্রম হয়ে থাকে, যেমন অন্য মার্কেটপ্লেসে আপনি কখনোই কিভাবে মুজা দিয়ে বানরের পুতুল তৈরী করা হয়, এমন স্কিল বিক্রির প্রচার শুনবেন না, আবার কিভাবে স্পেশাল ওন্থন (এক প্রকার চৈনিক খাবার) তৈরী করা হয় সেই স্কিল বিক্রির নজিরও পাবেন না, কিন্তু এমনটাই হয়ে থাকে পিপিএইচে, যেকোনো বাঁধহারা স্কিল আপনি আওয়ার্লি আকারে প্রকাশ করতে পারবেন এখানে, সেটা বাহ্যিক বস্তুর সংক্রান্ত কোনো স্কিল হৌক কিংবা আপনার কম্পিউটারের দক্ষতা দিয়ে হউক, সব কিছুর সুব্যাবস্থা আছে পিপিএইচে।

কতিপয় অনলাইন মার্কেটপ্লেস রয়েছে, যাদের সার্ভিসসমুহের সাথে পিপিএইচের প্রস্তাবিত সার্ভিসের মধ্যে অগাধ মিল রয়েছে, তবে পার্থক্য একটি বিশেষ অংশে পরিলক্ষিত, যদিও পিপিএইচ যুক্তরাজ্য ভিত্তিক ভিন্ন ভিন্ন দেশে এর শাখা রয়েছে, যেমন www.PeoplePerHour.com এর About এ লেখা; আমরা বিশ্বাস করি আমাদের গন্তব্য যেখানে সেই পথে উৎসব করতে করতে যাওয়াই শ্রেয়, পিপিএইচ আমাদের আত্মা, আমাদের পুরো দল রয়েছে, লন্ডন, রিডিং, সারবর্ন, নিউ ইয়র্ক, এথেন্স, কেয়ুর, মারিঙ্গা, হায়দ্রাবাদ এবং বিশ্বের আরো কিছু বিস্তর এলাকা জুড়ে! আর তাই এখানে বেশিরভাগ বায়ারেরাই বড়মাপের প্রজেক্টে আগ্রহী হয়, অন্যান্য একই গঠনের মার্কেটপ্লেসে যেই সার্ভিস মাত্র ৫ ডলারে দেয়া হয় সেই সার্ভিস আওয়ার্লি আকারে বিশ্বমানের সেলারদের কাছ থেকে শতগুন বেশি দামে বিক্রি হয়, এক কথায় সস্তার তিন অবস্থা এর মধ্য দিয়ে বায়ার কিংবা সেলারকে যেতে হয় না, স্বভাবতই কাজের মূল্যায়ন অন্যান্য মার্কেটপ্লেসের চেয়ে অনেক অংশেই বেশি পিপিএইচে বৈকি।


আগামী পর্বগুলোতে পিপিএইচ সম্বন্ধে আরোও  বিস্তারিত আলোচনা করা হবে, সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন, ধন্যবাদ।



লেখকঃ শোয়েব মোহাম্মাদ
বিঃদ্রঃ - এই লেখাটি "মাসিক কম্পিউটার জগৎ" ম্যাগাজিনের "জুলাই ২০১৩ ইং" সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে।

0 টি মন্তব্য

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন